স্বাধীনতা পরবর্তী যে কয়টি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে তার মধ্যে আইআরডিপি তথা বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) অন্যতম। স্বাধীনতাত্তোর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা, জনসংখ্যা সমস্যা এবং নিজস্ব পূজির অভাব এই তিনটি সমস্যার সমাধানে আইআরডিপি সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। পল্লী এলাকার জনগণকে সংগঠিত ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অধিক খাদ্য উৎপাদন, আধুনিক কৃষি পদ্ধতির সম্প্রসারণ, উন্নত কৃষি ব্যবস্থাপনা, কৃষি পণ্যের বাজারজাতকরণ, আধুনিক সেচ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ প্রভৃতির মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং পল্লী অঞ্চলের কর্মসংস্থান সৃজন করার লক্ষ্যে প্রখ্যাত সমাজ বিজ্ঞানী ড. আখতার হামিদ খাঁন কর্তৃক উদ্ভাবিত বিশ্ব নন্দিত ‘কুমিল্লা মডেল’ বা ‘‘দ্বি-স্ত সমবায় ব্যবস্থা ’’ যা সমন্বিত পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচি (আইআরডিপি) নামে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়। তিনি সমন্বিত পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচী (আইআরডিপি) বা ‘‘দ্বি-স্তর সমবায় ব্যবস্থা ’’ এর সফলতার প্রেক্ষাপটে পল্লী উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে এ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন এবং তাঁহার নির্দেশে পল্লী অঞ্চলের দরিদ্র মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে সমন্বিত পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচী (আইআরডিপি)’কে সারা দেশে সম্প্রসারিত করা হয়। তৎকালীন সরকার কর্তৃক গৃহীত পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় আইআরডিপি এর বিশাল অবদানের স্বীকৃতি এবং পল্লী উন্নয়ন ও দারিদ্র্য দূরীকরণে Strategy হিসেবে ব্যাপক কর্মসূচীতে অর্থ বরাদ্দ করা হয়। তৎকালীন সময়ে সরকারের নির্দেশে আইআরডিপি’র মাধ্যমে পল্লী উন্নয়নের ক্ষেত্রে Multi Dimensional and Multi Sectoral Strategy গ্রহণ করা হয়। ফলে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে এর কার্যক্রম বিশেষভাবে গ্রামীণ সংগঠন সৃষ্টি, নেতৃত্বের বিকাশ, কৃষির আধুনিকায়ন, উৎপাদন বৃদ্ধি, দারিদ্র বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন এবং নিজস্ব সঞ্চয় জমার মাধ্যমে পুঁজি গঠন করে ক্ষুদ্র ঋণের ভিত্তি রচনায় ব্যাপক সফলতা অর্জন করে। তৎকালীন সরকারের শাহাদাতের পর সমবায় আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়ে। ফলে বিআরডিবি সমবায় সমিতির পাশাপাশি গ্রাম পর্যায়ে অনানুষ্ঠানিক দল গঠনের মাধ্যমে পল্লী উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করে কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। পল্লীর ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক, বিত্তহীন পুরুষ ও মহিলা জনগোষ্ঠিকে সমবায় সমিতি ও অনানুষ্ঠানিক দলে সংগঠিত করে প্রয়োজনীয় সেবা ও উপকরণ সরবরাহের মাধ্যমে বিআরডিবি কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, আত্মকর্মসংসহান সৃষ্টির মাধ্যমে পল্লী উন্নয়ন, দারিদ্র্য নিরসন এবং নারীর ক্ষমতায়নে নিরলসভাবে কাজ করছে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস